ফরিদুল মোস্তফা খান, কক্সবাজার থেকে :::
জমজমাট হয়ে উঠেছে কক্সবাজারের ৪৪টি পশুর হাট। তবে প্রতিটি পশুর হাটেই দেশীয় গরুর সংখ্যাই বেশী। যার ফলে পশুর মূল্য অন্য যেকোন বছরের চেয়ে বড়েছে। ঈদ একেবারে আসন্ন হওয়ায় বাজারে ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। সীমান্তের ইয়াবা ব্যবসায়িরা নগদ টাকায় বাঘা বাঘা গরুগুলো ক্রয় করে নিচ্ছেন। কেউ কেউ গুরু কিনে তা আবার এলাকায় মহড়ার পাশাপাশি নিজেদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়ে দিচ্ছেন। অনেকেই নিজের কেনা গরু কত টাকা দিয়ে নিয়েছেন, তা উল্লেখ করে ঠকছে না জিতছে জানতে চাচ্ছেন ফেইসবুকে। আবার কেউ কেউ শখের বসে নিজের কেনা গুরুকে ইয়াবা খাওয়াচ্ছেন বলে জানাগেছে। গতকাল কক্সবাজার শহরে এইরকম বেশ কয়েকটি গুরু দেখা গেছে। বিকেলের দিকে লালদিঘীর পাড়ে একটি গরু রশি ছিড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় এদিক সেদিক লাফিয়ে কয়েক ব্যক্তিকে গুরুতর আহত করেছেন। প্রত্যেকদশীরা বলেছেন, এই গরুটিকে গুটি (ইয়াবা) খাওয়ানো হয়েছে, এই কারণেই পাগলামি করছে। তবে বাজারে জনস্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক এমন পশু বাজারজাত রোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
জেলা প্রশাসনের সূত্রে জানা গেছে, এবারে ৪৪টি পশুর হাটের মধ্যে স্থায়ী ২১টি, অস্থায়ী ২৩টি পশুর হাট রয়েছে। এ ছাড়া গ্রামাঞ্চলে অনুমোদনবিহীন কিছু পশুর হাট রয়েছে।, চকরিয়ায় ১০টি, মহেশখালী ৬টি, উখিয়ায় ৬টি, কক্সবাজার সদরে ৫টি, টেকনাফে ৭টি পেকুয়ায় ২টি, ও কুতুবদিয়ায় ২টি পশুর হাট বসেছে। এ ছাড়াও কক্সবাজার সদর উপজেলায় একটি মহিষের হাট রয়েছে।
কক্সবাজার শহরের প্রধান পশুর হাট খুরুশকুল সড়কে গিয়ে দেখা যায়, অসংখ্য পশুতে জমজমাট হয়ে উঠেছে বাজার। গত কয়েকদিন ধরে ক্রেতারা পশুর মূল্য নিয়ে একটু বিব্রত হলেও এখন পছন্দের পশুটি ক্রয় করে বাড়ি ফিরছেন ক্রেতারা। এই হাটে পশু রাখার জন্য সারিবদ্ধ স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। খুরুশকুল রাস্তার মাথা পশু হাটের ইজারাদার নরুল আজিম কনক বলেন, হাটে বিক্রির জন্য বিপুল সংখ্যক পশু এনেছেন ব্যবসায়িরা। আজ থেকে পশু বিক্রি আরো বাড়বে জমজমাট হয়ে উঠবে বাজার।
কক্সবাজার জেলায় অন্যতম পশুর হাট মহেশখালীর বড় মহেশখালী বাজারে এক পশু ব্যবসায়ি আমির হামজা জানান, যে দরে পশু বিক্রি হচ্ছে তা সন্তোজনক। ১২টি গরু নিয়ে গত এক সপ্তাহ আগে বড় মহেশখালীতে এসে এখন ৭টি গরু বিক্রি হয়েছে বলে জানান তিনি। আর ৫টি আজ অথবা কালকের মধ্যে বিক্রি হয়ে যাবে। যারা পশু নিয়ে এসেছেন তারা সবাই সন্তেষ্ট
এদিকে বিক্রেতারা সন্তোষ্ট হলেও ক্রেতাদের মাঝে রয়েছে অসন্তোষ। পিএমখালীর পশুর হাটে গরু ক্রয় করতে গিয়ে দেশী গরুর দাম শুনে চমকে উঠেছেন বলে জানালেন লিটন নামের এক ক্রেতা। তিনি জানান, প্রতিটি গরুরই ২০/২৫ হাজার
টাকা বেশী দাম হাকা হচ্ছে। এতে অনেকেরই পশু ক্রয় করতে সমস্যা হচ্ছে।
কক্সবাজার পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পশুর হাটসহ সর্বস্থরে পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা সাদা পোশাকে মাঠে থাকবে।
এইদিকে পবিত্র ঈদুল আজহার বাকি মাত্র একদিন। তাই এখন পশু বাজারের দিকে সর্বস্থরের মানুষের আসা যাওয়া বেড়েছে। শুক্রবার বন্ধের দিন থেকে জেলার বাজারগুলোতে ক্রেতাদের আনাগুনা বাড়লেও কেনাবেচা বাড়েনি। বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পশুর দাম আকাশচুম্বি। ক্রেতাদের দাবী গত বছরের ছেয়ে প্রতিটি গরু ২০ হাজার টাকা বেশি দাম বাড়িয়ে বলছে ক্রেতারা। তাই গরু কিনতে গিয়ে বাজেট আর দামের সাথে মিল খাওয়াতে পারছে না ক্রেতারা। একই সাথে বাজারে দেশি গরু আধিক্য বেশ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে মায়ানমার আর ভারতীয় গরু নাই বললেই চলে। তাই দেশি গরু দাম চড়া বলে মনে করছে সচেতন মহল।
গতকাল শহরের প্রধান বাজার খুরুশকুল রাস্তার মাথার পশু বাজারে গিয়ে দেখা গেছে এখনো চাহিদা অনুযায়ী গরু কেনা বেচা হচ্ছে না। মানুষ এখনো দরদামে ব্যস্ত । এ বাজারে গরু দেখতে আসা ভূমি অফিসের কর্মকর্তা হারুন উর রশিদ বলেন, বাজারে কেনা বেচা এখনো দেখছি না, তার প্রধান কারন বিক্রেতারা গরু দাম বলছে অস্বাভাবিক। আমার মতে প্রতিটি গরু কমপক্ষে স্বাভাবিকের ছেয়ে ২০/৩০ হাজার টাকা দাম বাড়িয়ে বলছে। অপরদিকে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, জালটাকার ছড়াছড়ি ও পকেট মারের উপদ্রব। একই সাথে জেলায় গরু চোরের সংখ্যা বাড়াছে আশঙ্কাজনক।
পাঠকের মতামত: